যেভাবে একটি মুক্তা গড়ে উঠেঃ মুসলিম নারীদের জন্য একটি খুতবাহ (পর্বঃ ১)

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

ইসলামের চিহ্নকে দুনিয়ার বুক থেকে মুছে ফেলার জন্য সীমান্তে খ্রিস্টান বাহিনীর প্রস্তুতির খবর যখন তাঁর কানে পৌঁছালো, আবু ক্বাদামাহ আশ-শামী’ই দ্রুত মসজিদের মিম্বারের দিকে ছুটলেন। একটি শক্তিশালী ও আবেগময় ভাষণের মাধ্যমে তিনি তাঁর সম্প্রদায়ের মাঝে ইসলাম ও নিজেদের ভূখণ্ডকে রক্ষা করার জন্য এক তীব্র আকাঙ্ক্ষার আগুন জ্বালিয়ে দিলেন, ডাকলেন আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার জন্য। মসজিদ ছেড়ে তিনি যখন অন্ধকার ও শান্ত গলি দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন একজন মহিলা তাঁকে থামালেন এবং বললেন, “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ!” আবু ক্বাদামাহ থামলেন, কিন্তু কোনো জবাব দিলেন না। মহিলাটি আবার সালাম দিলেন এবং সাথে এটাও যোগ করলেন, “একজন ধার্মিক লোকের জন্য এ ধরনের আচরণ ঠিক নয়।” তিনি কয়েক পা এগিয়ে গিয়ে বললেন, “মুসলিমদের জিহাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মসজিদে বলা আপনার কথাগুলো আমি শুনেছি। আর আমার কাছে এই জিনিসগুলো আছে।” তিনি আবু ক্বাদামাহ এর দিকে দু’টি লম্বা চুলের বেণী বাড়িয়ে দিলেন, আর বললেন, “এগুলো ঘোড়ার লাগাম হিসেবে কাজে pearl

লাগানো যেতে পারে। হতে পারে এগুলোর কারণেই, যারা জিহাদে যাচ্ছে তাঁদের খাতায় আল্লাহ আমার নাম উঠিয়ে দিতে পারেন।”

পরদিন মুসলিম গ্রামবাসীরা যখন খ্রিস্টান আর্মির বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য রওনা করছিল, তখন একটি বালক ভীড় ঠেলে আবু ক্বাদামাহ এর ঘোড়ার সামনে এসে দাঁড়ালো। “আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার অনুমতি দিন।” কয়েকজন বয়স্ক যোদ্ধা বালকটিকে দেখে হাঁসলো। “ঘোড়া তোমাকে পদদলিত করবে,” তারা বলল। কিন্তু আবু ক্বাদামাহ তার চোখের দিকে তাকালেন, যখন সে আবার বলছিল, “আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে জিহাদে যোগ দেয়ার অনুমতি দিন।” এবার আবু ক্বাদামাহ বললেন, “একটা শর্তঃ যদি তুমি যুদ্ধে মারা যাও, তবে আমাকে তোমার সাথে জান্নাতে নিয়ে যেতে হবে।” বালকটি হাঁসলো। “এটি একটি অঙ্গীকার।”

দু’ দলের যোদ্ধারা যখন মুখোমুখি হয়ে তুমুল যুদ্ধে লিপ্ত হলো, তখন বালকটি আবু ক্বাদামাহ এর ঘোড়ার পেছন থেকে বলল, “আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে তিনটি তীর দিন।”

“তুমি সেগুলো নষ্ট করবে,” আবু ক্বাদামাহ বললেন।

বালকটি আবার বলল, “আল্লাহর ওয়াস্তে তীরগুলো আমাকে দিন।”

আবু ক্বাদামাহ তাকে তীর দিলেন এবং সে নিশানা ঠিক করল।

“বিসমিল্লাহ!” তীরটি ছুটে গেল এবং একজন রোমান সৈন্যকে হত্যা করল।

“বিসমিল্লাহ!” দ্বিতীয় তীরটি ছুটে গেল এবং আরেকজন রোমান সৈন্যকে হত্যা করল।

“বিসমিল্লাহ!” তৃতীয় তীরটি আরও একজন সৈন্যকে হত্যা করল। তারপর একটি তীর এসে বালকটির বুকে বিঁধল এবং তাকে ঘোড়া থেকে ফেলে দিল। আবু ক্বাদামাহ লাফ দিয়ে বালকটির পাশে চলে গেলেন, আর তাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন, “অঙ্গীকারের কথা ভুলে যেও না।” বালকটি তার পকেট থেকে একটি থলে বের করে তাঁর হাতে দিয়ে বলল, “এটা আমার মা-কে ফিরিয়ে দিবেন।” “কে তোমার মা?” আবু ক্বাদামাহ জিজ্ঞেস করলেন।

“যে মহিলাটি গতকাল আপনাকে চুলের বেণীগুলো দিয়েছিল।”

একবার ভাবুন এই মুসলিমাহর কথা। তিনি কীভাবে তাক্বওয়ার এত উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন যে, নিজের চুল বিসর্জন দিয়েছিলেন, যেখানে আজকাল মুসলিম নারীরা একই কাজ করছে কাফির নারীদের অনুকরণে; কীভাবে নিজের সন্তানকে পাঠিয়েছিলেন আল্লাহর রাস্তায়, যেখানে সন্তানদের সামনেই আজ ধুঁকে ধুঁকে মরছে মায়েরা। বস্তুতঃ সে তাঁর জীবন কাটিয়েছে আল্লাহর আনুগত্যে। আর যখনই তাঁর সামনে আল্লাহ কর্তৃক পরীক্ষা এসেছে তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন। তিনি শুধু নিজেই উত্তীর্ণ হননি, বরং তাঁর সন্তানকেও দেখিয়েছেন ঈমানের সৌন্দর্য্য, করিয়েছেন উত্তীর্ণ।

কিন্তু আজ নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাহকে ভুলে যাওয়ায় আমাদের অধিকাংশ আলাপ-আলোচনা ও খুতবা শুধুমাত্র পুরুষদের দিক নির্দেশনার জন্যই দেয়া হয়। আমরা আজ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো পথ ভুলে গেছি, যিনি সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিন ব্যয় করতেন নারীদের দ্বীনি শিক্ষা দেয়ার কাজে। হজ্জের সময় নারীরা তাঁর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকটে আসতো; রাস্তায় এমনকি তাঁর বাড়িতেও, দ্বীনের ব্যাপারে জানার জন্য। ঈদের সালাতে পুরুষদের সাথে সম্ভাষণের পর তিনি বিলাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে সাথে নিয়ে নারীদের অংশে যেতেন এবং সেখানেও ভাষণ দিতেন। আল্লাহ একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা নাযিল করেছেন যার নাম সূরা আন-নিসা অর্থাৎ ‘নারী’। আরেকটির নাম আল-মারিয়াম। আর তৃতীয়টি নাম আল-মুজাদালাহ অর্থাৎ ‘আবেদনকারীনী মহিলা’। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহকে উজ্জ্বীবিত করতেই আজকের ভাষণটি দেয়া হবে বিশ্বাসী নারী অর্থাৎ আল-মু’মিনাত-দের উদ্দেশ্যে।

প্রিয় বোন, প্রিয় মা, প্রিয় কন্যা,

প্রত্যেকেই চায় সুখে শান্তিতে ও আনন্দে থাকতে, আর আমি নিশ্চিত আপনারাও এটা অগ্রাহ্য করবেন না। তাহলে কোথায় এই সুখ-শান্তি আর আনন্দ? আর কোথায় এবং কখন আপনারা এই শান্তি চান? আপনারা কি দুনিয়ার জীবনে শান্তি আর আনন্দ পেতে চান আখিরাতের বিনিময়ে? নাকি পেতে চান আখিরাতে, যখন আল্লাহর সাথে আপনার দেখা হবে? যেখানেই যান আপনি দেখতে পাবেন, একদল মানুষ, মিডিয়া আর সংস্কৃতি যারা ছুটে বেড়ায় দুনিয়াবী সুখের পেছনে। এটাই কি প্রকৃত সুখ? শেষ বিচারের দিন আল্লাহ দুনিয়ার সবচাইতে সুখী কাফিরকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন। তারপর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করবেন, “তুমি কি জীবনে কখনও সুখ পেয়েছিলে?” কাফিরটি বলবে, “কখনই না!” অর্থাৎ দুনিয়াতে যা কিছুই ঘটুক না কেন আখিরাতের সুখই প্রকৃত সুখ। তারপর আল্লাহ দুনিয়ার সবচাইতে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়া লোকটিকে জান্নাতে প্রেরণ করবেন, আর জিজ্ঞেস করবেন, “তুমি কি জীবনে কখনও দুঃখ পেয়েছ?” লোকটি উত্তর দিবে, “কখনই না!” আর ভাববেন না এই সুখ কেবল আখিরাতের জন্য। বরং এটা আমাদের জীবনের জন্যও। শুনুন এবং বোঝার চেষ্টা করুন আল্লাহর বাণীগুলোঃ

“যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত।”

[আন-নাহলঃ ৯৭]

প্রিয় বোন,

আপনার বোঝা উচিত, আপনি অথবা যে কেউ নিক্ষিপ্ত হতে পারেন জাহান্নামের আগুনে! আল্লাহর কসম, আমরা কেউই রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কন্যা ফাতিমা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) থেকে উত্তম নই। আর তিনি বলেন,

“O Fatimah the daughter of Muhammad, Ask me whatever you wish from my wealth, for I shall avail you nothing to Allah.”

অর্থাৎ ‘তুমি আমার মেয়ে’ কিংবা ‘আমার বাবা ‘এই এই’ ছিলেন’ এই ধরনের কোন পরিচয়ই কাজে আসবে যদি তুমি জান্নাতে যাওয়ার জন্য ‘আমল না কর।

ইসলামে এমন অনেক নারী আছে, আল্লাহর প্রতি যাঁদের রয়েছে পূর্ণ তাক্বওয়া। যখন অনেক নারী তাদের হৃদয়ে কাফির গায়িকা, ক্রীড়াবিদ কিংবা অভিনেত্রীদের ছবি ধারণ করে, তখন আপনাদের ধারণ করা উচিত ফাতিমাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) ও অন্যান্য মু’মিনাহদের ছবি। আসিয়া, ফির’আউনের স্ত্রী, যাঁর ঈমানকে আল্লাহ তা’আলা এমন একজনের ছায়ায় সমৃদ্ধ করেছিলেন, যিনি বলেছিলেন, “আমিই তোমাদের প্রভু!” যখন ফির’আউনের কানে তার স্ত্রীর ঈমানের কথা পৌঁছালো, সে তাঁকে মারলো এবং তার সৈন্যদেরও মারার নির্দেশ দিল। তারা তাঁকে দুপুরের প্রচণ্ড রোদে বাইরে নিয়ে গেল এবং তাঁর হাত-পা বেধেঁ অবিরাম মারতে লাগল। তখন তিনি কার পথে ফিরে গিয়েছিলেন? তিনি ফিরে গিয়েছিলেন আল্লাহর পথে! তিনি দু’আ করেছিলেন,

“হে আমার পালনকর্তা! আপনার সন্নিকটে জান্নাতে আমার জন্যে একটি গৃহ নির্মাণ করুন, আমাকে ফেরাউন ও তার দুস্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন এবং আমাকে যালেম সম্প্রদায় থেকে মুক্তি দিন।”

এটা বলা হয় যে, তিনি যখন দু’আ করলেন তখন আকাশ তাঁর জন্য উন্মুক্ত হয়ে গেল এবং জান্নাতে তিনি তাঁর বাড়ি দেখতে পেলেন, তিনি হাঁসলেন। সৈন্যরা অবাক হয়ে দেখতে লাগলো- এতো অত্যাচারের পরও তিনি কীভাবে হাঁসছেন? হতাশ ফির’আউন একটি বড় পাথরের চাঁই আনার নির্দেশ দিলেন এবং আসিয়ার উপর নিক্ষেপ করে তাঁকে হত্যা করতে বললেন। কিন্তু পাথরের চাঁই আনার আগেই আল্লাহ তাঁর জান কবজ করলেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত বিশ্বাসী পুরুষ এবং নারীদের জন্য তিনি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলেনঃ

“আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের জন্যে ফেরাউন-পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা! আপনার সন্নিকটে জান্নাতে আমার জন্যে একটি গৃহ নির্মাণ করুন, আমাকে ফেরাউন ও তার দুস্কর্ম থেকে উদ্ধার করুন এবং আমাকে যালেম সম্প্রদায় থেকে মুক্তি দিন।”

[আত-তাহরীমঃ ১১]

আমরা যখন জিহাদ এবং শহীদদের সম্পর্কে কথা বলি, আপনারা কি জানেন, প্রথম কোন মুসলিম আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়েছেন? তিনি ছিলেন আম্মার (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এর মা সুমাইয়া (রাদিয়াল্লাহু আনহা)। আবু জাহেল যখন তাঁর এবং তাঁর স্বামী ইয়াসীর ও পুত্র আম্মার এর ইসলাম গ্রহণের কথা শুনলো, তাদেরকে বাড়ি থেকে বের করে দিল এবং মারধোর করল। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন তাঁদের নিকটে যেতেন, তাঁদের ঈমানের এই কঠিন পরীক্ষার পরিপ্রেক্ষিতে বলতেন,

“হে ইয়াসীরের পরিবার! ধৈর্য ধারণ কর। জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য তোমাদের একটি দিন নির্ধারিত রয়েছে।”

একদিন আবু জাহল সুমাইয়া (রাদিয়াল্লাহু আনহা) কে প্রচণ্ড মারলো, কিন্তু তারপরও তিনি তাঁর দ্বীন পরিত্যাগ করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন, যা আবু জাহলকে খুব রাগিয়ে দিল। তিনি (রাঃ) যখন আকাশের দিকে তাকিয়ে তপ্ত বালিতে শুয়ে ছিলেন, তখন আবু জাহল একটি বর্শা নিয়ে তাঁর শরীরের মাঝখান বরাবর নিক্ষেপ করলেন। আর তাঁর (রাঃ) পরিবার ও মুসলিম উম্মাহর মধ্যে তিনিই ছিলেন প্রথম মুসলিম যিনি আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়েছিলেন।

প্রিয় বোন,

আমরা আমাদের আদর্শ পাই পবিত্র কুর’আন থেকে। আপনারা হয়তো বালক ও রাজার গল্পটি শুনে থাকবেন। বালকটির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যখন পুরো গ্রাম মুসলমান হয়ে গেল, তখন রাজা একটি বিশাল অগ্নিকুণ্ড তৈরি করার নির্দেশ দিলেন, যারা নিজের ধর্ম পরিত্যাগ করবে না তাদেরকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার জন্য। একজন মু’মিনাহ যখন তাঁর বাচ্চাকে নিয়ে আগুনের সামনে দাঁড়ালেন, তখন তাঁর নিষ্পাপ বাচ্চার দুর্বলতার কথা ভেবে তিনি ধর্ম পরিত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু বাচ্চাটি তাঁকে বলল, “অপেক্ষা করছ কেন মা? তুমি তো সত্যের পথে আছ, এগিয়ে যাও!” তিনি সায় জানিয়ে মাথা ঝাঁকালেন। তারপর বাচ্চাসহ তাঁকে মৃত্যুর মুখে নিক্ষেপ করা হল।

“তারা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিল শুধু এ কারণে যে, তারা প্রশংসিত, পরাক্রান্ত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল, যিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের ক্ষমতার মালিক, আল্লাহর সামনে রয়েছে সবকিছু।”

[আল-বুরুজঃ ৮-৯]

প্রিয় বোন,

আপনারা আপনাদের অনুকরণীয় আদর্শ বেছে নিবেন বর্তমান মুসলিম সমাজ থেকে। একজন মুসলিমাহর ছেলে আমাদের বলেছিল, তার মা ঠিক করেছিলেন সাধারণত মহিলাদের আসরে যা ঘটে তা তাঁর জন্য নয়। তিনি নিজেকে সালাত আদায়ের দিকে ফিরিয়ে নিলেন এবং রাতে আল্লাহর কাছে দু’আ করতেন। একদিন মহিলাটির ডাক শুনে তাঁর সন্তান সালাত কক্ষে ছুটে আসল। তাঁর ছেলে বলল, “আমি ভিতরে প্রবেশ করে দেখলাম সিজদারত অবস্থায় আমার মা বলছেন, তিনি প্যারালাইসড হয়ে গেছেন।” তারপর ছেলেটি তাড়াতাড়ি তাঁকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেন এবং তাঁর চিকিৎসা শুরু হল। কিন্তু সেখানে তাঁর সুস্থ্য হওয়ার আশা ছিল খুবই ক্ষীণ। তখন মহিলাটি তাঁর সন্তানকে বললেন, তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে সালাত কক্ষে আগের অবস্থায় বসিয়ে দিতে। সিজদারত অবস্থায় তিনি আল্লাহর কাছে দু’আ করতে থাকলেন এবং যখন রাত নামল তিনি তাঁর ছেলেকে ডাকলেন। বললেন, “আমি আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি, আর যখন কোন কিছু আল্লাহর উপর বিশ্বাস রেখে ছেড়ে যাওয়া হয়, তা কখনও হারায় না।” সিজদারত অবস্থাতেই তিনি মারা গেলেন। তাঁর শরীর অসাড় হয়ে যাওয়ায় সিজদারত অবস্থাতেই তাঁকে গোসল করানো হল। তাঁর জানাযার সালাতও আদায় করা হল সিজদারত অবস্থায় এবং তাঁকে কবরও দেওয়া হল একইভাবে। আর নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমরা সবাই পুনরুত্থিত হব সেই অবস্থায়, যেই অবস্থায় আমরা মৃত্যুবরণ করব। অর্থাৎ শেষ বিচারের দিন ঐ মুসলিমাহ আল্লাহর সামনে পুনরুত্থিত হবেন সিজদারত অবস্থায়। কারণ, ঐ অবস্থাতেই তিনি জীবন অতিবাহিত করেছেন এবং তাঁর মৃত্যুও ঘটেছে একই অবস্থায়।

 

বিশ্বাসী মা, বোন, স্ত্রী সম্পর্কে এমন আরও অসংখ্য ঘটনা রয়েছে যা আমরা জানি এবং কিছু কিছু ঘটনা একমাত্র আল্লাহই জানেন। যখনই কোন হালাক্বার (ধর্মীয় আলোচনা) আয়োজন করা হয়, মুসলিম পুরুষদের চেয়ে নারীদের আধিক্য পরিলক্ষিত হয়। আমেরিকার উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই মুসলিম নারী। আপনি যদি কোন ইসলামিক আলোচনা কিংবা সম্মেলনে যান, সেখানেও দেখতে পাবেন মুসলিম ভাই ও বোনদের মধ্যে পার্থক্য। দুঃখজনক হলেও সত্য, মাঝে মাঝে ভাইদের মাঝে অনুপ্রেরণার অভাব দেখা বোনদের মাঝে তা দেখা যায় না। আর এটা যদি ভবিষ্যতেও পরিলক্ষিত হয়, তবে ইনশা আল্লাহ এই বোনগুলোই পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে একটি বিশ্বাসী নারী ও পুরুষের দল গড়ে তুলবে।

ওয়াল্লাহু আকবার!

ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) যখন ছোট ছিলেন, তখনই তাঁর বাবা মারা গিয়েছিল। তিনি তাঁর ছাত্রদের বলতেন, তাঁকে বড় করে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর মায়ের কঠোর পরিশ্রমের কথা এবং সবসময় তাঁর জন্য দু’আ করতেন। বাগদাদের হিমশীতল রাত্রিতে তাঁর মা অনেক আগেই ঘুম থেকে উঠে তাঁর জন্য পানি গরম করতেন, যাতে তাঁর ছেলে আহমাদ ফজরের সালাতের জন্য উযূ করতে পারে। তারপর তিনি তাঁকে কম্বলে জড়িয়ে নিজে শুধু তাঁর জিলবাবটি পড়ে নিতেন। আর ফজরের অনেক আগেই অন্ধকার ও শীতল গলির ভিতর দিয়ে প্রধান মসজিদের দিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যেতেন, যাতে শ্রেণীকক্ষে তাঁর ছেলে ভালো আসনটি পান। তাঁর ছেলে আহমাদ যখন ২য় কিংবা ৩য় শ্রেণীতে পড়তো, তখন সারাদিন কুর’আন ও সুন্নাহ নিয়ে পড়তো, আর তিনি সারাদিন তাঁর ছুটির জন্য অপেক্ষা করতেন, যাতে তাঁকে নিরাপদে বাড়ি নিয়ে যেতে পারেন। আহমাদের বয়স যখন ১৬, তখন তিনি তাঁর জন্য অর্থ এবং খাবার সংগ্রহ করে তাঁকে বললেন, “জ্ঞানের অনুসন্ধানে ভ্রমণ কর।” ইমাম আহমাদ মক্কা, মদীনা ও বিভিন্ন জায়গার জ্ঞানীদের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জনের জন্য বাড়ি ছেড়ে গেলেন। আর এভাবেই তাঁর মা তাঁকে ইসলামের চারজন বিখ্যাত ইমামের একজন হিসেবে গড়ে তুললেন।

প্রিয় বোন,

এত কিছুর পরও একজন অমুসলিম আপনার কাছ থেকে কী আশা করে? সে কি আপনাকে মুক্ত করতে চায়? আর কীসের থেকেই বা মুক্ত করতে চায়? আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেক? আল্লাহ আপনার জন্য যে (দ্বীন) জীবনবিধান নির্বাচন করেছেন তা থেকে? আর এর পরিবর্তে সে আপনাকে কী দিবে? সুখ? আল্লাহর কসম, দেয়ার মত কোন সুখের মালিক সে নয়। সে কি আপনাকে ভালোবাসা দিবে, রক্ষা করবে কবরের আযাব থেকে? কিংবা জাহান্নামের প্রহরী অথবা মৃত্যু থেকে? আর তারা কেনই বা শুধু সুন্দরী তরুণীদের মুক্ত করতে চায়? তারা কেন বয়স্কদের মুক্ত করার কথা বলে না? তারা কেন মুক্ত করার কথা বলে না নিজের দেশের নারীদের? তারা কেন নিজের ঘরের নারীদের মুক্ত করার কথা বলে না? তাদের লক্ষ্য কেন শুধুমাত্র ১৩-২৮ বছরের তরুণীদের প্রতি। আর কেন তাদের প্রথম দাবি আপনাদের হিজাব মুক্ত করা?

প্রিয় বোন,

তাদের এসব কথা খুব সতর্কতার সাথে বিবেচনা করুন। আল্লাহর কসম! শেষ বিচারের দিন তিনিই হবেন আপনার চির শত্রুঃ

“বন্ধুবর্গ সেদিন একে অপরের শত্রু হবে, তবে খোদাভীরুরা নয়।”

[সূরা যুখরুফঃ ৬৭]

একজন কাফির নারী ঠিক তাই বলে, যা সে একজন নারী সম্পর্কে ভাবে। তার দৃষ্টিতে, “আপনি কে?- এটা আপনার আসল পরিচয় না। আপনি কী পড়েন, আর দেখতে কেমন?- এটাই আপনার আসল পরিচয়!”

আর ফ্যাবিয়ান নামক এক ফ্রেঞ্চ মডেলের কথাই শুনুন, যিনি ফ্যাশন ইন্ড্রাস্টির উপর থুথু নিক্ষেপ করে বলেন, “ফ্যাশন হাউজগুলো আমাকে একটি পুতুলে পরিণত করেছিল, কাঠের পুতুল। লক্ষ্যঃ মানুষের হৃদয়কে প্রভাবিত করে মানসিকতার পরিবর্তন করা। আমি জেনেছি কীভাবে মূল্যহীন হতে হয়। আমরা একটি নোংরা পৃথিবীতে বাস করি, যেখানে নংরামিই সবকিছু।”

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন আরাফাহর ময়দানে দাঁড়িয়ে যখন বিদায় হজ্জের ভাষণ দিয়েছিলেন, সেখানে বলেছিলেন, “নারীদের প্রতি তোমরা বিনয়ের সাথে ব্যবহার কর।”

ইতিহাস বলে, একই বছর ইসলাম যখন এই কথা বলছিল, ইউরোপে খ্রিস্টান পাদ্রীরা তখন নিজেদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক করছিল নারীরা কী মানুষ নাকি পশু! সে পাদ্রীরাই কুফফারদের পূর্বপুরুষ, যারা আপনাদের ‘মুক্ত’ করতে চায়!

এ ব্যাপারে আরও অনেক কিছুই বলা যেতে পারে। কিন্তু আমি প্রত্যেক মুসলিম মা, মেয়ে এবং স্ত্রীর প্রতি দেয়া নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেয়া উপদেশের কথা বলেই শেষ করবঃ

“যদি কোন নারী তার পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রোযা রাখে (রামাদানে), নিজেকে রক্ষা করে (জিনায় লিপ্ত হওয়া থেকে), আর তার স্বামীর কথা মেনে চলে, তবে তাকে বলা হবে যে, ‘যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা, জান্নাতে প্রবেশ কর’।”

বোন আমার, সেখানেই তো আপনার যেতে চাওয়া উচিত।

“হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ মান্য কর, যখন তোমাদের সে কাজের প্রতি আহবান করা হয়, যাতে রয়েছে তোমাদের জীবন। জেনে রেখো, আল্লাহ মানুষের এবং তার অন্তরের মাঝে অন্তরায় হয়ে যান। বস্তুতঃ তোমরা সবাই তাঁরই নিকট সমবেত হবে।”

[সূরা আনফালঃ ২৪]

আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আপনাদের প্রকৃত জীবনের দিকে ডাকছে।

প্রিয় বোন, সাড়া দিন!

পাদটীকাঃ মুহাম্মদ আল-শরীফের এই খুতবাটি সংগ্রহ করা হয়েছে Hudatv.com ওয়েবসাইট থেকে।

 

Collected

Posted on অক্টোবর 11, 2013, in ইসলামকে জানা. Bookmark the permalink. এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান.

এই সাইডটি ভিজিট করার সময় আপনি যাদি কোন অশ্লীল এডভাটাইজমেন্ট দেখেন তাহলে একটু হোমপেজের পাশে “এডভাটাইজমেন্ট মুক্ত ব্রাউজিং করুন” পাতাটি দেখুন।